Thursday, July 31, 2008

হারায়ে খুঁজি :



আজ সকাল থেকেই মুডটা অফ দিয়ার। একে তো গা প্যাচপ্যাচে গরম তার ওপরে লোডশেডিং! যাও বা অনেক পরে পাওয়ার এলো, কিন্তু অর্কুট খুলতেই মেজাজ টা আরও গরম হয়ে গেল। সুমন্তর আজও কোনও স্ক্র্যাপ নেই। মন খারাপ করা মেজাজ নিয়েই স্কুলে বেরিয়ে গিয়েছিল তখন। ভেবেছিল বাড়ি ফিরে একটা মেল করবে সুমন্তকে। গতকাল অনেক রাত পর্যন্ত জেগেছিল ওর স্ক্র্যাপের আশায়। কিন্তু ও কোনও স্ক্র্যাপ করেনি, অথচ মাঝেমাঝেই ওকে অনলাইন দেখা যাচ্ছে। আজ প্রায় ন’মাস হয়ে গেল ওর সাথে আলাপ হয়েছে অর্কুটে। কোনদিন এমন হয়নি। প্রথম থেকেই কেমন যেন একটা বাঁধনে পরে গিয়েছিল দিয়া। চুম্বকের মত টেনেছে ওকে সুমন্ত। কাজ ফেলে ছুটে আসত ওর ডাকে। রাত জেগে জেগে চ্যাট করেছে ইয়াহু মেসেঞ্জারে প্রায় দিন। কিন্তু আজ প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল, ওর কোনও সাড়া নেই। কিছু আর ভাল লাগছিল না, ল্যাপটপ বন্ধ করে দিয়ে ও তাই শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল। কি এমন হল? কেন কথা বলছে না ও? দেখা করতে রাজি হয়নি তাই? কিন্তু কি করে রাজি হবে কিছুতেই বুঝতে পারছিল না। ওর মনে যে ভীষন ভয়। ওর সিক্সথ্ সেন্স ওকে বলেছিল দেখা করলে ও নিজেকে আটকাতে পারবে না। এই বয়সে নতুন করে আর কোন সম্পর্কে বাঁধা পরতে চায় না দিয়া। ওর মনকে ও কঠিন শাসনে বেঁধে রেখেছে।

দিয়ার বয়স এখন ৩৬। সুমন্তরও তাই। ওর বৌ আছে। আছে একটি পাঁচ বছরের ছেলে, সোহম। দিয়া এই সব ভেবেই মনকে বাঁধে, জোর করে। অনেক বার ভেবেছে গল্প করবে না ওর সাথে। ইয়াহু মেসেঞ্জারে ডাকলেও সাড়া দেবে না। কিন্তু পারে নি। মনের ঝাঁপি খুলে দিয়েছে সুমন্তর সামনে, এমনকি রজতের কথাও ওকে বলে বসে আছে। আর বলবে নাই বা কেন, রজতের ধ্যান ধারনা, চিন্তা ভাবনা, কথা বলার ভঙ্গি সবই যে সুমন্তর সাথে ভীষন ভাবে মিলে যায়। দিয়ার মনে হয় ও যেন রজতের সাথেই কথা বলছে। আজ প্রায় ১৩ বছর পরে ও যেন আবার রজতকেই খুঁজে পেয়েছিল সুমন্তর মধ্যে। প্রান খুলে গল্প করে, যেমন আগে করত রজতের সাথে, ঘন্টার পর ঘন্টা। ভীষন ফেমাস ছিল ওরা ইউনিভার্সিটিতে, তর্কবিদ হিসেবে। যে কোনো বিষয় পেলেই হল, তর্ক করতে বসে যেত দুজনে। আর রজত যেন ইচ্ছে করেই ওর বিরূদ্ধে যুক্তি শানাতো। সুমন্তও একই ভাবে তর্ক করে ওর সাথে। অবশ্য যখন বুঝতে পারে যে ওকে রজত ভেবে উচ্ছস্বিত দিয়া, তখন ভীষন রেগে যায়। একটুও শুনতে চায় না রজতের গল্প, ওদের ইউনিভার্সিটির গল্প, প্রেমের গল্প। কিন্তু সেদিন মন দিয়ে শুনেছিল, যেদিন দিয়া ওকে রজতের সেই চিঠির গল্প শুনিয়েছিল।

ইউনিভার্সিটি থেকে দু বছর মাষ্টার ডিগ্রি কমপ্লিট করে বাড়ি ফিরেছিল ভীষন খুশিতে। ভেবেছিল বাড়িতে মা বাবা কে জানিয়ে দেবে রজতের কথা। রজত খুবই ভালো ছাত্র, ভবিষ্যত উজ্বল, বাড়িতে সেভাবে আপত্তি করার কোনো কারন ছিল না। কিন্তু বাড়ি ফেরার দু দিনের মাথায় পেল রজতের চিঠি। “পারিবারিক সমস্যার কারনে কিছুতেই তোকে বিয়ে করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাকে ভুলে যাস, আমাকে চিঠি লিখিস না, কারন আমি উত্তর দেব না। ভালো থাকিস।” এই ছিল রজতের সংক্ষিপ্ত চিঠি, যা ওকে আঘাত করেছিল যত, তার থেকেও বেশি অপমানিত করেছিল। লজ্জায়, অপমানে, দুঃখে দু'চোখের পাতা এক করতে পারেনি বেশ কিছুদিন। আর চেষ্টাও করেনি রজতের খবর নেওয়ার। প্রানপন চেষ্টা করেছিল রজতকে ভুলে যাবার। আস্তে আস্তে সব বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল, যারা ওদের দুজনেরই বন্ধু ছিল। ৬ মাসের মাথায় অংকের টিচার হয়ে চলে এসেছিল এই শহর, জলপাইগুড়িতে। তারপর থেকে কেটে গেল এতগুলো বছর ছাত্রী পড়িয়ে। গত বছর ওর ছোটো ভাই সফ্টওয়ার ইঞ্জিনীয়র হিসেবে সদ্য চাকরি পাওয়ার পরে এই ল্যাপটপ টা গিফ্ট করেছিল, আর তখন থেকেই একটু একটু করে বদলাতে থাকে দিয়ার জগত। ভাই ই প্রথম অর্কুটে একটা অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে যায় তিথি নাম দিয়ে। ভাইয়ের বৌ সঙ্গীতার সাথে অর্কুটেই কথা হয় এখন। তারপর আস্তে আস্তে সঙ্গীতার বন্ধুরা সব ওর বন্ধু হতে থাকলো। আর এই ভাবেই ও পেয়ে গেল একদিন সুমন্তকে। সুমন্ত থাকে আমেরিকায়, মেরীল্যান্ডে। সেখানে ও প্রায় এক দশক ধরে আছে। একটি ছেলে আর বৌ নিয়ে সুখের সংসার। অ্যালবামে ওর বৌএর ছবি দেখেছে দিয়া। খুব সুন্দরী দেখতে। মনে মনে কখনও একটু ঈর্ষাও বোধকরে আজকাল দিয়া। কিন্তু দিয়াকে সুমন্ত কখনও সেভাবে বৌ এর গল্প শোনায়নি।

সেদিন রজতের চিঠির গল্প শুনে অনেকক্ষণ কোনো কথা বলেনি সুমন্ত। বোঝাতে চেয়েছিলো দিয়া কে। যে হতে পারে, সত্যি কোনো বিশেষ কারন ছিলো, বিয়ে না করতে চাওয়ার। এতে নিজেকে অপমানিত ভাবছো কেনো?? কিন্তু দিয়া আর এই নিয়ে কথা এগোতে চায় নি। বলেছিলো, রজতের কথা আর ভাবতে চাই না। সেটা শুনেও মনে হয় একটু দুঃখ পেযেছিলো সুমন্ত। সেদিন ওই যেন রজতের হয়ে দিয়ার সাথে তর্কে বসেছিল। বলেছিল, “ তিথি, তুমি ভুল করছ কোথাও।” বলেছিল, “রাগ, দুঃখ, অভিমান ঠিক আছে। কিন্তু অপমানিত বোধ কোরো না। তাতে তুমি তোমার ভালোবাসাকেই অপমান করবে।” আরো অনেক কিছু বলেছিল সেদিন ও। আর ঠিক সেই সময়ই সুমন্তর মাথায় দেখা করার ভুতটা চেপে যায়। সে কোনো কাজে ইন্ডিয়া আসছে নেক্সট মাসে, জলপাইগুড়িতে এসে দেখা করতে চায়। কিন্তু তাতে প্রবল ভাবে আপত্তি জানায় দিয়া। কিছুতেই দেখা করতে রাজি হয়নি। সেদিন ই শেষ কথা। তারপর আর না স্ক্র্যাপ, না ওয়াই/এম এ চ্যাট, কোথাও দেখা পায়নি সুমন্তর।

হঠাত ই মোবাইলে টা বেজে উঠলো। এখন রাত ১২ টা বাজে। এতো রাতে ফোন এলে ভীষণ টেনশন হয়। নাম্বার দেখে মনে হছে শিলিগুড়ি থেকে কেউ করেছে।

হ্যালো বলার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে ভারী গলায় প্রশ্ন
----তিথি?
দিয়া মাঝে মাঝে ভুলে যায় যে ও ই তিথি নাম নিয়ে অর্কুটে বসে আছে। না বলতে গিয়েও থেমে যায়।
---হ্যাঁ বলছি।
এতো রাতে অপরিচিত গলা শুনে একটু বিরক্তি নিয়েই বলে,
----কে বলছেন ??
ওপার থেকে ভেসে এল জোরে হাসির আওয়াজ।
----কেমন চমকে দিলাম তো?? আমি সুমন্ত বলছি।
----তুমি?? আমার ফোন নাম্বার পেলে কোথা থেকে??
প্রায় চিত্কার করে ওঠে দিয়া।
----ভুলে যেও না, তোমার ভাই এর বৌ, আমার অর্কুট ফ্রেন্ড। ওর কাছ থেকে অনেক কায়দা করে পেতে হয়েছে, মাড্যাম্!
এদিকে দিয়া তখনও ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
----এ তোমার ভারি অন্যায় সুমন্ত, এতো দিন কোনো খবর নেই, আমি কত রকম চিন্তা করছি, আর এভাবে রাত দুপুরে তুমি আমার সাথে রসিকতা করছো?? মিথ্যে কথা বলছ কেনো??
---মিথ্যে নয় মাড্যাম, আমি এই মুহুর্তে শিলিগুড়ি বাস টার্মিনাস এ বসে আছি। এখানেই একটা হোটেলে উঠেছি, কাল সকালে অনুগ্রহ করে যদি এই অধম কে দর্শন দেন তো অধমের জীবন সার্থক হয়!”
আবার পর মুহুর্তেই স্বর পাল্টে যায় ওর।
----না বোলো না প্লীজ। আমি সাত সমুদ্র পার করে এসেছি শুধু তোমার জন্যে। তিথি, আমি তোমাকে একবার টি দেখতে চাই, প্লীজ!
এবার দিয়া বেশ ঘাবড়ে যায়। কি করবে এখন?? মনের দোলাচল কে বাড়তে দেবে, নাকি তাকে শাসন করবে?
----কি হল?? সাড়া নেই কেন??..
----কি হচ্ছে, এসব?? কেন মিথ্যে বলছ?? এই বুড়ো বয়সে এ সব মানায় নাকি? তুমি এরকম ছেলে মানুষের মতো আচরন করবে, এ আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।
----প্রেমের কোন বয়স নেই, তিথি।
----প্রেমের কথা কে বলেছে ??
----ওহো, বলনি বুঝি?? তাহলে প্লীজ, বলে ফেলো তাড়াতাড়ি। সময় নষ্ট করো না। আর শোনো, কাল একটা ব্ল্যাক শাড়ি পড়ে এসো।
ও যেন ধরেই নিয়েছে দিয়া যাচ্ছে ওর সাথে দেখা করতে। দিয়াও কি তাই ভাবছে না?? সুমন্তের রসিকতার হাত থেকে বাচাঁর জন্যে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেল শিলিগুড়ি গিয়ে ওর সাথে দেখা করতে। তাড়াতাড়ি ফোন রেখে দিলো ও। না হলে ওদিক থেকে রসিকতার মাত্রা বেড়েই চলত। সুমন্ত বলেছে ওরা সপরিবারে এসেছে, কাল তিথির সাথে দেখা করেই বেরিয়ে যাবে দার্জিলিং। দেখা করতে হলে, কাল-ই করতে হবে।

*************************************************************

।২।

ভীষন এক উত্তেজনায় সারা রাত ঘুমোতে পারে নি দিয়া। কোনো রকমে সকালে উঠেই সেজে গুজে বেরিযে পরল বাস স্ট্যান্ড এর দিকে। দিয়া আজ একটু সেজেও নিয়েছে। দেখতে খুব ভালো না হলেও ওকে বেশ আকর্ষণীয় লাগে সবার, এটা ও নিজেও বেশ ভালোই বুঝতে পারে। লম্বা, ছিপছিপে ফিগারে, শিফন শাড়ি তে ওকে বেশ মানায়, আজ তাই একটা ব্ল্যাক আর ব্লু কম্বিনেশনের শিফন পরেছে। লম্বা চুলটা ছেড়েই রেখেছে। এক ঘন্টার জার্নি করতে হবে ওকে। সুমন্তর বৌ সাথে রয়েছে বলে একটু যে অস্বস্তি হচ্ছে না তা নয়, কিন্তু তবুও একটা কিছুর আকর্ষন ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আর কিছুক্ষন পরেই দেখা হবে সুমন্তর সাথে।

বাস কন্ডাক্টরের চিৎকারে ওর চমক ভাঙ্গল। বুঝতে পারল গন্তব্য স্থানে পৌছে গেছে ও। কিন্তু যে আগ্রহ নিয়ে এসেছিল, এখন যেন কেমন একটা ভয় ভয় ভাব জাগতে শুরু করেছে মনের ভেতরে। বুকের ভেতরে যেন কেউ হাজার টা ড্রাম পিটিয়ে চলেছে। চলার গতি রুদ্ধ করেছে যেন কেউ, পা সরছে না। কোনো রকমে বাস থেকে নেমে ভেতরে ঢুকে খুঁজতে থাকল সুমন্ত কে এদিক ওদিক। ওকেই খুঁজে বার করতে হবে, কারন সুমন্ত কখনো ওকে দেখেনি। অ্যালবামে নিজের ফোটো দিতে ভরসা পায় না দিয়া, সুমন্ত অনেক বার চেয়েছিল, ও দেয় নি। কিন্তু কোথায় সুমন্ত? দেখতে পাচ্ছে না তেমন কাউকে। কি মনে হতে টার্মিনাস এর ভেতরে একটা রেঁস্তোরা আছে, সেই জায়গাটার কথা মনে পরে গেল। রজতের সাথে ইউনিভার্সিটি তে পড়াকালীন অনেক বার এসেছে এই রেঁস্তোরাতে। সেখানেই গেল দেখতে, আছে কি না। কিন্তু সেখানেও নেই দেখে বেরিয়ে আসতেই শুনল ওর নাম ধরে কেউ ডাকছে।

-----দিয়া

কিন্তু এ তো সুমন্তর গলা নয়! পেছনে তাকিয়েই ওর মাথা ঘুরে গেলো, এ কাকে দেখছে ও? ওর সামনে দাঁড়িয়ে রজত। একই রকম চেহারা, একই রকম হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে দু’হাত প্রসারিত করে। কাল বিকেলেই দেখা হয়েছিল, আবার আজ দেখা হল, এই রকম-ই একটা ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে সে। দিয়ার সমস্ত শক্তি যেন লোপ পেতে বসেছে, শরীর অবশ হতে শুরু করেছে। ওকে জোর করে বসিয়ে দিলো রজত একটা কেবিনে। ঢুকেই পর্দা টেনে দিয়ে, কিছু বোঝার আগেই এক ঝটকায় ওকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে নিলো নিজের বুকের ওপরে। দিয়া সামলাতে পারছে না নিজেকে। ভাঙ্গতে শুরু করেছে, কিন্তু জোর করে আটকে রেখেছে নিজেকে।

----কি হচ্ছে রজত?? ছেড়ে দাও। আমি একজনের সাথে দেখা করতে এসেছি, আমাকে যেতে হবে।
বলছে ঠিকই, কিন্তু ওর উঠে যাবার ক্ষমতা আর নেই। আর রজত তখন হাসতে শুরু করেছে।
----কার সাথে দেখা করতে এসেছো?? সুমন্ত??
দিয়া আর চমকায় না। ও এতক্ষনে বুঝতে পেরেছে সব। এতো দিন ধরে সুমন্ত কে রজত ভেবে ও কিছু ভুল করে নি। কিন্তু তবুও ও ধরা দিতে চায় না।
----তোমার বৌ আছে, রজত। তাকে অপমান করো না। একবার যা ভুল করেছো, আবার তার পুনরাবৃত্তি ঠিক নয়।
রজত তবুও ছাড়ে না, ওই ভাবেই জড়িয়ে ধরে থাকে দিয়া কে। কানের কাছে মুখ নামিয়ে বলে,
----বৌ টা তো ফেক রে বোকা মেয়ে! নেট থেকে ফোটো চুরি করা কোনো এক সুন্দরী মেয়ের। বিয়েটা আর করা হয়ে ওঠেনি আমার ও।
-----মানে??
-----“মানে তো খুব সহজ, তুই যেমন দিয়া থেকে তিথি হয়েছিস, আমিও তেমনি রজত থেকে সুমন্ত হয়েছি। তুই নাম ছাড়া আর কিছু বদলাতে পারিস নি। আমি সব বদলে দিয়েছিলাম, যেদিন প্রথম তোর ফোটো সঙ্গীতার অ্যালবামে এ দেখেছিলাম। ওর অ্যালবামে এ প্রথমে তোর ভাই কে দেখি। তখনই সিওর ছিলাম যে এ তোরই ভাই। পরে সঙ্গীতা কে অনেক খুঁচিয়ে তোর একটা ফোটো দেখি ওর অ্যালবামে। একই রকম আছিস তুই, একটুও বদলাস নি। আর সেদিন থেকেই শুরু করি এই প্ল্যান। তোকে ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠিয়েছিলাম তিন চারটে ফেক প্রোফাইল বানিয়ে। এবার আর তোকে হারাতে চাই নি রে।”

একের পর এক অনেক কথা বলে চলেছে রজত। সব কথা কি কানে ঢুকছে দিয়ার?? দিয়া ভাঙ্গতে শুরু করেছিলো অনেক আগেই। ১৩ বছরের জমে থাকা সব অভিমান, অপমান, রাগ, দুঃখ, এক নিমেষে বাষ্প হয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে। ঘুমিয়ে থাকা সব ইন্দ্রিয় গুলো যেন সোনার কাঠির ছোঁয়ায় জেগে উঠছে একে একে। সেই একই রকম সাহস, একই রকম আবেগ, একই রকম জোর করে ভালোবাসা ছিনিয়ে নেবার ষ্টাইল, আর পারে না দিয়া, ভেঙ্গে পরে, খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে ধরা দেয়, নিজের খুশিতে। নিজেকে সমর্পন করে রজতের কাছে।

আর রজত? দিয়ার সমর্পনে সে যেন তার গোটা পৃথিবী কে পেয়ে যায় হাতের মুঠোয়। আরো শক্ত হয় তার হাতের বাঁধন।

দিয়ার মনে পরে যায়, ওর এক অর্কুট বন্ধু সুপর্নার লেখা একটা কবিতার শেষ কয়েকটি লাইন..

অনেক আশায় বুক বেধেঁছি যখন,
দূরে কোথাও সরিয়ে রেখে তোমায়,
ঠিক তখন-ই এলে হে প্রিয় সখা,
তোমার স্পর্শে ভেজাবে বলে আমায়!

আমি তখন সাত রঙা এক পাখি,
উড়ছি এক অজানা সুখের দেশে!
মনের সকল দ্বিধা দ্বন্দ ঝেড়ে,
আজ আমি যে ভিজবো নিঃশেষে!

আমি তখন ভাসছি যেন হাওয়ায়,
সুখ সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে মন!
ভাঙতে ভাঙতে কোন সে আলোর পথে,
এ যে আমার নিঃশর্ত সমর্পন!




সুপর্না মিত্র।
প্যারিস, ফ্রান্স।
৩১ শে জুলাই, ২০০৮

17 comments:

Sharmila Dasgupta said...

khub khub bhalo laglo...

suchismitabandyopadhyay said...

bhalo laglo galpota pore.

Anonymous said...

Galpota gograshe gillam. :)

শারদীয়া পুস্পাঞ্জলি said...

darun romantic golpo.:)
Shraddha.

Unknown said...

bes bhalo laglo..[:)]

Anonymous said...

khub sundor likhechho... darun laglo

Unknown said...

so cute.. wonder if only it happens in reality!

Soma Banerjee said...

mone holo jeno sotti ghotona porchhi....

jhum said...

didi darun laglo tomar romantic premer golpo. ekdom sottikarer prem mone hocche kintu.....

Unknown said...

suporna ,tomar golpota ami 1 niswase pore fellam.

moumitachowdhury said...

jiboner golpo tomar kolome khub sundor bhabe fute utlo.

Shuchismita said...

my favourite! bhison bhalo legechhe golpo ta amar. bhison romantic. aar tomar lekhar style o khub songjoto. kothao ektu kom nei, kothao ektu beshi nei. khub sabolil lekha.

Santosh Pramanik said...
This comment has been removed by the author.
Santosh Pramanik said...

sobai jah boleche............tarmajhe aamar r natun kore kichu bolar nei......

lekhar somoy ........bhison feel korechis nijeke......diyar sathe.

Sauranshu said...

ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম! ভালো থেকো

KS said...

Chomotkar likhecho Suparna di. Sundor, jhorjhore tomar golpo bolar style, prokhor porimitibodh ar golpota darun romantic!
Onek onek shubhechcha roilo tomar agami diner sob lekhar jonyo.

Unknown said...

sikta:

porte giye ebonng poRa shesh hole vabchhilam,ei lekhika keno lekhata continue kore na...



khub sundar galpo....